- 20 July, 2023
- 0 Comment(s)
- 390 view(s)
- APDR
২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বল্গাহীন সন্ত্রাস ও মৃত্যু মিছিলের প্রতিবাদে নাগরিক কনভেনশন, ২০ জুলাই ২০২৩
বক্তব্য রাখছেন সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ শূর
বক্তা হিসেবে উপস্থিত বিশিষ্ট নাগরিকদের কয়েকজন
উপস্থিত শ্রোতাদের একাংশ
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বল্গাহীন সন্ত্রাস ও মৃত্যু মিছিলের প্রতিবাদে নাগরিক কনভেনশন ।
স্থান : মহাবোধি সোসাইটি হল , কলকাতা , ২৭ জুলাই ২০২৩
পঞ্চায়েত নির্বাচন ,2023 ছিল এক রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসের বাস্তবতা । ভোটকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শাসকদলের গুন্ডাবাহিনী হত্যা করেছে বিভিন্ন গ্রামে । চলেছে জীবননাশের হুমকি , বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট , ব্যালট বাক্স নষ্ট, বিরোধী দলের ব্যালট পেপার চিবিয়ে খাওয়া! এই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই নির্বাচন সম্পন্ন হলো । কিন্তু ভোট দানের মতো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে কেন মৃত্যু মিছিল হবে , কেন তৈরি হবে দমবন্ধ করা সন্ত্রাসের আবহাওয়া ?নাগরিকদের মৃত্যু মিছিল আর সন্ত্রাসের বিরোধিতায় জোরালো প্রতিবাদ সংঘটিত করা জরুরী মনে করে ই এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয় যেখানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মীর্জা হাসান ( ভাঙড় জমি রক্ষা কমিটি) অপর্ণা সেন, মীরাতুন নাহার , বোলান গঙ্গোপাধ্যায় , সমীর আইচ, নব দত্ত ও বিভিন্ন গণ সংগঠনের সাথীরা । প্রথম বক্তা মির্জা হাসান তাঁর বক্তব্য শুরু করেন এই বলে যে, " ভোট গণনা শেষ, লাশ গণনা এখন ও চলছে !" সহজ এই বাক্যটি আসলে নির্বাচনী সন্ত্রাসের প্রকটতাকে তুলে আনেন সভার সামনে । তিনি আর ও বলেন যে, এই বছরের নির্বাচনী সন্ত্রাস বিগত বছরের সমস্ত সন্ত্রাসকে ছাপিয়ে গেছে । নমিনেশন জমা দেওয়ার সময় থেকে ভাঙড়ের মাটিতে নেমেছে এই সন্ত্রাস আর শেষ হয়েছে হত্যা , হুমকির মধ্যে দিয়ে । শাসকদলের বিরুদ্ধে ভাঙড়ের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন । এই প্রতিরোধকে প্রতিহত না করতে পারলে তারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা ,এটা শাসকদল বুঝেছে আর তাই মানুষের অধিকারের ওপর চালিয়েছে ভয় আর আতঙ্কের বুলডোজার।
গণ আন্দোলন কর্মী মীরাতুন নাহার বলেন , " ভয় কে আর ভয় পেলে চলবেনা "। তিনি আরও বলেন , বাস্তবে ভয় আর সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ করলো শকসকদল । বর্তমান রাজ্য সরকার প্রশাসনকে জণগনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে । প্রশাসন কি সরকার আর শাসকদলকে সুরক্ষা দিতে রয়েছে? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কে দেবে তবে? বিরুদ্ধচিত্তে সভার উদ্দেশ্যে তিনি এই প্রশ্ন গুলি রাখেন । তিনি কনভেনশনের দাবিগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আহ্বান জানান , অবিলম্বে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের জোটবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে । পরবর্তী বক্তা অপর্ণা সেন বক্তব্য রাখার শুরুতে ফিরে যান নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর্যায়ে । তিনি বলেন , "নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় আমরা নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা উদ্ধৃতিতে বলতাম, " এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না" ...কিন্তু আজ দেখছি আবার ও আমরা এক জল্লাদের উল্লাসমঞ্চতে ই দাঁড়িয়ে রয়েছি" । পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস ও হত্যার সমস্ত দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে এবং সুবিচার দিতে হবে-এই দাবিতে তিনি ও রাজ্যের বুদ্ধিজীবিরা মুখ্যমন্ত্রীকে একটি খোলা চিঠি দেবেন বলে জানান তিনি। এই চিঠিটি তিনি সভায় পাঠ করেন এবং আগ্রহীদের ঐ চিঠিতে স্বাক্ষর করার আহ্বান করেন ।
বোলান গাঙ্গুলী জানান, ভাঙড়ে সুপরিকল্পিতভাবে অত্যাচারী পুলিশ অফিসারদের নিয়োগ করা হয়েছিল নির্বাচন ' করানোর' জন্য । গ্রামগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাণনাশ ও গ্রামছাড়া করার হুমকি দিয়ে এসেছে শাসকদলের কর্মীদের সাথে পুলিশ। যার পরিণতিতে এই সন্ত্রাস হয়েছে। গ্রামগুলির ঘরে কোনো পুরুষ সদস্য থাকতে পারছেনা, এই বর্ষার মরসুমে যারা ধানক্ষেতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন , মহিলারা সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন। শাসকদল আর প্রশাসনের মধ্যে আজ আর কোনো কোনো ফারাক নেই ।কনভেনশনের প্রস্তাবে পাঁচ দফা দাবির সাথে তিনি যুক্ত করার প্রস্তাব দেন , প্রশাসন আর শাসকদলের মধ্যে ফারাক করতে হবে, রাখতে হবে। আন্দোলন কর্মী নব দত্ত এই লাগামহীন সন্ত্রাস প্রসঙ্গে বলেন ,রাজ্যে কার্যত 'crimilisation of politics' লাগু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি লুম্পেন বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। খর্ব করা হয়েছে , রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্বশাসনের ক্ষমতা। উপূর্যপরী, প্রতিটি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা করে তিনি প্রস্তাব রাখেন , কনভেনশনের প্রস্তাবে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা যাবেনা - এই দাবি সংযোজনের। বিশিষ্ট জনেদের পাশাপাশি এই কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন ডঃ স্বপন জানা, অম্লান ভট্টাচার্য, শ্রীবাস তিওয়ারি ( নব পর্যায়) , সমীর আইচ সহ ছাত্র সংগঠন পি ডি এস এফ ,আর এস এফ । যারা সবাই নির্বাচনী সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করে রাজ্যবাসীর কাছে আহ্বান রাখেন এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রাস্তায় নামার , প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার । উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ডাঃ বিনায়ক সেন ।
এই কনভেনশনে সমিতির পক্ষ থেকে দাবি রাখা হয় :
১) ভোট গণনার রাতে ভাঙড়ে গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।
২) প্রতিটি হত্যার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
৩) মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) সমস্ত ঘর ছাড়া পরিবারকে অবিলম্বে ঘরে ফেরানোর জন্য প্রশাসনকে এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫) আগামী নির্বাচনগুলি যাতে সন্ত্রাসহীন হয়, নির্বাচনগুলিতে ইচ্ছুক মানুষরা যাতে স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারে তার জন্য এখন থেকেই প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
কনভেনশনের সভায় রাজ্যের সাম্প্রতিক সন্ত্রাস ও মৃত্যু মিছিলের বিরোধিতায় গান পরিবেশন করে উজ্জীবিত করেন গণ সাংস্কৃতিক সংস্থা " স্ফুলিঙ্গ" এর সাথীরা।