- 29 June, 2023
- 0 Comment(s)
- 506 view(s)
- APDR
উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ : ৫১ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ২৫ জুন ২০২৩
২৫ জুন ২০২৩ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির ৫১ তম প্রতিষ্ঠা দিবস । এই দিনটিকে উদযাপন করতে সমিতির পক্ষ থেকে ২৬ জুন একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় । এই সভায় বিষয় ছিল' উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ'। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতির ( উড়িষ্যা) নেতৃত্ব লিঙ্গারাজ আজাদ, বিস্থাপন বিরোধী জনবিকাশ আন্দোলন মঞ্চের ( ঝাড়খন্ড) আন্দোলন কর্মী দামোদর,তুরি ও ঠুরগার 'প্রকৃতি বাঁচাও - আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চে'র আহ্বায়ক সুপেন হেমব্রম। আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন সমিতির সহ সভাপতি তাপস চক্রবর্তী।
এই আলোচনা সভায় তিনজন প্রতিনিধির আলোচনায় উঠে আসে উন্নয়ন তথা বিকাশ কিভাবে দেশের আদিবাসী জনজাতির জীবন জীবিকা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির বিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই বাস্তবতার কথা। বিকাশের অছিলায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলার বাস্তবতা ছিল তাদের বক্তব্যের মুল উপজীব্য বিষয়।
প্রথম আলোচক সুপেন হেমব্রম তার বক্তব্যে সাবলীল ভঙ্গিমায় জানান, ঠুরগা প্রকল্পের ফলে এলাকার অনেক ঝরনা ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে। আদিবাসী জনগণের উচ্ছেদ নিশ্চিত করেছে এই প্রকল্প। অন্যদিকে, পুরুলিয়ার ৯২-৯৩ টি গ্রামের অধিকাংশ গ্রামেই এখন ও কোনো বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই, স্কুল আছে তিন থেকে চারটি ,যদিও বেশিরভাগ গ্রামেই অঙ্গনওয়ারী স্কুল পর্যন্ত নেই। এই না থাকাগুলোকে পূরণ করার দায় সরকার তার বিকাশের প্রকল্পে আনেনা। বরং সরকার ঘোষিত বিকাশ আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই, মানুষ এই বিকাশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন স্বাভাবিক কারণে ই। তিনি বলেন, আজ অযোধ্যার মানুষ নিজেদের আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই বুঝতে শিখেছেন যে, জঙ্গলের ওপর অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে। সরকার বা বনদপ্তরের কোনো অধিকার নেই। অযোধ্যার জঙ্গলে আগুন লাগলে তা নেভাতে অযোধ্যার ভূমিপুত্ররাই এগিয়ে আসেন। এগিয়ে আসেন অযোধ্যার মা -বোনেরা। বনদপ্তরের আধিকারিকরা আগুন লাগার খবর পেয়ে ও ঘুমিয়ে থাকেন।তাই,অযোধ্যার মানুষের লড়াই আজ জঙ্গলের ওপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এই লড়াই তারা জীবন দিয়ে লড়বেন।
দামোদর তুরি তার বক্তব্যে আস্থা রাখেন দেশের চলমান গণআন্দোলনগুলির উপর। তিনি দেখান, দেশের সরকারগুলি কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার বিকাশের কথা ভাবেনি কখনও। উপরন্তু নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাকে অগ্রাহ্য করে পুঁজিপতি / কর্পোরেটদের দালালি করতে মরিয়া দেশের সব ক'টি সরকার।
আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের দরুন রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা সুরক্ষিত না করে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় বিস্থাপিত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ । শুকিয়ে গেছে নদী আর ঝরনা। যা গোড্ডার আদিবাসী মানুষের চাষ ও পানীয় জলের চাহিদা মেটাত। গোড্ডার আদিবাসীরা ও সাধারণ মানুষ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন , আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। যার ফলে প্রথমার্ধে অধিগৃহীত জমির বাইরে এক ইঞ্চি জমিও আদানি কেড়ে নিতে পারেনি। দামোদর আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আগামী দিনে রাষ্ট্রের সহযোগিতায় আদানি গোষ্ঠী এই আদিবাসী মানুষের ওপর চরম আক্রমণ নামিয়ে বলপূর্বক জমি দখল করতে পারে। এই দখলদারি আটকানোর উপায় হিসেবে তিনি বলেন "আমাদের সংগঠিত হতে হবে। সংঘর্ষ হবে অনিবার্যভাবেই। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সংঘর্ষ ছাড়া আর কোনও বিকল্প আমাদের কাছে নেই"। 'বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষে ' যখন দেশেরই ভূমিপুত্র আদিবাসীদের 'ক্রিমিনাল' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় রাষ্ট্র , যখন আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করা আন্দোলনকারীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়, সাংবাদিক, লেখকদের কলমের নিব ভেঙে দেওয়া হয় তখন তা গণতন্ত্রকে পরিহাসের বিষয় করে তোলে। দামোদরের প্রতিটি শব্দে রাষ্ট্রের শোষণ বনাম মানুষের প্রতিরোধের কথা এভাবেই উঠে আসে।
নিয়মগিরি সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে লিঙ্গারাজ আজাদ দেখান, কিভাবে দেশের আদিবাসী মানুষদের রাষ্ট্র 'অসভ্য' হিসেবে পরিচিত করিয়েছে দেশের মানুষের কাছে ।এই আদিবাসী জনজাতির কাছ থেকে জঙ্গলের অধিকার কেড়ে নিয়ে তা বিক্রি করেছে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে।
সমিতির এই আলোচনা সভায় তিনজন প্রতিনিধি, আদিবাসীদের এই লড়াইকে আরও সংগঠিত করতে এগিয়ে আসার জন্য সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান করেন। বলেন, এপিডিআর-এর মতো সংগঠনকে কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে জল জঙ্গল জমির ওপর আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ।
এই আলোচনা সভায় সমিতির বিভিন্ন শাখার সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও অন্যান্য গণ সংগঠন ও ব্যক্তিদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখজনক। শ্রোতাদের মনোনিবেশ বক্তাদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। অধিকার আন্দোলনের সংগঠন হিসেবে সমিতির প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মতো বিষয় নির্বাচনকে, বক্তা এবং উপস্থিত শ্রোতারা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেছেন।