- 02 December, 2024
- 0 Comment(s)
- 56 view(s)
- APDR
প্রেস বিবৃতি : ১।১২।২০২৪ : বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বন্ধ কর
ASSOCIATION FOR PROTECTION OF DEMOCRATIC RIGHTS(APDR),
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি
১৮ মদন বড়াল লেন,
কলকাতা:৭০০০১২
প্রেস বিবৃতি
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বন্ধ কর।
যে কোনো দেশে ধর্মীয় বা ভাষিক সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার দায় সে দেশের সরকারের। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধদের মান মর্যাদা, জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুস সরকারের ব্যর্থতা ক্রমশই প্রকট হয়ে উঠেছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙা, আগুন লাগানো, মন্দিরে হামলা, সম্পত্তি দখল করার মত ঘটনা এখনও বন্ধ হয়নি। বহু জায়গাতেই প্রবল ভয়ের মধ্যে সংখ্যালঘুদের দিন কাটাতে হচ্ছে। লাগাতার এরকম ত্রাসের মধ্যে, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে, দমবন্ধকরা পরিবেশে বাস করা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। এমনকি বাউল- ফকিরদের আখড়াও আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের মান-মর্যাদা, জীবন ও সম্পত্তির রক্ষার জন্য রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলে সংখ্যালঘুদের উপর নামানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন। দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। অথচ কিছুদিন আগেই দুর্গাপূজার সময় আমরা দেখেছি মুসলমান যুবকরা দলবদ্ধভাবে হিন্দু মন্দির, মন্ডপ ও মূর্তি পাহারা দিচ্ছে। সরকারি দুর্বলতা বা প্রশ্রয়েই বা মদতে পরিস্থিতির বদল ঘটলো। সরকারি মদত না থাকলে সাম্প্রদায়িক শক্তি এত সাহস পেতো না। দেশের রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক সংকট যত বেড়েছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যত খারাপ হয়েছে, মহম্মদ ইউনুসরা ক্ষমতায় থাকার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে তত মাথা নত করে চলেছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে ধর্ম নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবি জানাচ্ছি। নিজের ইচ্ছামত ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মাচরণ প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। শুধু সরকারি বিবৃতি দিয়ে নয়, জাতি-ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবে প্রকৃতই বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে রক্ষা করুক মহম্মদ ইউনুস সরকার। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক হামলাগুলিকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করলে চলবে না। কারণ বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিটি দেশের প্রতিটি ঘটনা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলিতে তার তীব্র প্রভাব পড়তে বাধ্য। ফেসবুক, এক্সের মত আন্তর্জাতিক সমাজ মাধ্যমগুলি এব্যাপারে দ্রুত ও তীব্র প্রভাব বিস্তার করে। ফলে বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি হয় প্রতিবেশী দেশগুলিতেও। আমাদের আশঙ্কা ইউনুস সরকার বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে না পারলে ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তি তার পূর্ণ সুযোগ নেবে। বিশেষত এপার বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, মুসলমান বিদ্বেষ ছড়িয়ে, নিজেদের নিয়ন্ত্রানাধীন প্রচারমাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা সেজে প্রভাব বাড়িয়ে নিজেদের ভোটবাক্স ভরার চেষ্টা করবে। সকলেরই তাই এব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। এটা বোঝা দরকার, এই সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের জন্য দায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রশক্তি - সাধারণ মুসলমান নাগরিকরা নয়। এটা ঠিকই বাংলাদেশের ঘটনাবলীর পিছনে কোন না কোন দেশের রাষ্ট্রীয় এজেন্সির ইন্ধন বা সরাসরি ভূমিকা থাকতে পারে। বাংলাদেশের ঘোলাজলে কেউ মাছ ধরতে চাইতেই পারে। কিন্তু নিজের দেশের মানুষকে অন্য দেশের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষার দায়িত্বও সে দেশের সরকারের। সেটা না পারাটা তার অপদার্থতা। অন্যদেশ গোলমাল তৈরির চেষ্টা করছে বললে সেটা নেহাত নিজের পিঠ বাঁচানোর অজুহাতের মতই শোনাবে। বিশেষ লাভ হবে না তাতে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশকেই রক্ষা করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ভারত সরকারের বিবৃতি ও ভারতের প্রধান শাসক দল বিজেপির ভূমিকা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে ভারত সরকার বা বিজেপির কোন কিছু বলার নৈতিক অধিকারই নেই। ভারতেও সংখ্যালঘু মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধদের উপরে লাগাতার নিপীড়ন চলছে। বাদ যাচ্ছে না দলিত, আদিবাসীরাও। মাত্র কয়দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে ৬ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে গুলি করে মেরেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। আবু বকর, ওমর খালিদ,গুলফিসা ফাতিমা, শরজিল ইমাম সহ অসংখ্য মুসলমান রাজনৈতিক নেতা ও সমাজকর্মীকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। ওবিসি রিজার্ভেশন কেড়ে নিয়ে, ওয়াকফ বিল এনে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি করে, মসজিদের নীচে মন্দির আছে জিগির তুলে খোড়াখুড়ি করে, সংখ্যালঘুদের বহু অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। বুলডোজার দিয়ে উত্তরপ্রদেশ, আসামে হাজার হাজার সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে নিরাশ্রয় করা হয়েছে। মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধ কারও জান-মাল নিরাপদ নয় আজকের ভারতে। হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদগ্র তাড়নায় বহুত্ববাদীরা আজ চরমভাবে লাঞ্চিত হচ্ছে। ভারত সরকারের বিবৃতিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার কথা মায়াকান্না ছাড়া কিছুই নয়। ভারত সরকারের চরম দ্বিচারিতার প্রকাশ ঐ বিবৃতি। নিজেদেশে সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিণত করে অন্যদেশের সংখ্যা লঘুদের জন্য সমানাধিকার চাওয়ার কোন অধিকার নেই মোদি সরকারের। এটা মিথ্যাচার। বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের, অন্যায় হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরির অপপ্রয়াস। এর বিরুদ্ধে দুই দেশের সচেতন মানুষকেই সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা ভরসা রাখতে চাই দুই দেশের সাধারণ মানুষের উপর। ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে, বিশেষত দুই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, সংখ্যালঘুদের মান-মর্যাদা, জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য সর্বতো ভাবে সচেষ্ট হোন। কোন দেশেই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বাড়তে দেবেন না। সুযোগ নিতে দেবেন না। ধর্মীয় সংখ্যাগুরু মৌলবাদের ভয়ংকর চেহারা আমরা গুজরাট, দিল্লি, ভাগলপুর সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বারবার দেখেছি। ভারত বা বাংলাদেশ কোথাও আমরা আর তা দেখতে চাই না।
রঞ্জিত শূর,
সাধারণ সম্পাদক,
এপিডিআর।
০১/১২/২৪